গত ২৫ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে, জাতীয় ধ্বনি পদ্মা সেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সংবাদপত্রে বিস্ময়কর ভাবে আলোড়িত হচ্ছে। হোক রাজনৈতিক নেতাদের প্রদর্শনী অথবা সাধারণ জনগণের সাপ্তাহিক ছুটি উপভোগের জায়গা, যে লক্ষ্যটি এত বছর ধরে অপ্রাপ্য বলে মনে হয়েছিল তা এখন নাগালের মধ্যেই।
পদ্মা বহুমুখী সেতু একটি প্রকল্প যা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম সরকার গঠন করার সময় “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা” অর্জনের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনা হিসাবে হাতে নেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই, এই প্রকল্পটির যাত্রা একটি বিরোধপূর্ণ পথের মুখোমুখি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা যেমন এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তাদের বিনিয়োগের চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নেন এবং ঘোষণা করেন যে, সরকার দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ করবে।
এটি আশ্চর্যজনক নয় যে, এই ঘোষণা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক বিতর্ক তৈরি করেছে। কিন্তু বিশ্ব-বিখ্যাত প্রকৌশলী এবং নির্মাণ শ্রমিকদের দ্বারা বছরের পর বছর ধরে এবং একটি বৈশ্বিক মহামারীর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার পরে, স্বপ্নের সেতুটি অবশেষে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
পদ্মা তার শক্তিশালী জলপ্রবাহ এবং ক্ষয়কারী স্রোতের দিক থেকে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নদীগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। এই উপচে পড়া নদীকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুল পরিমাণ পরিকল্পনা ও নিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল, যার সবগুলোই কোনো আন্তর্জাতিক উৎস থেকে বিশাল ঋণ না নিয়েই অর্থায়ন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুসারে, পদ্মা সেতুটি ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্মাণ প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি, যা ৩.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি এসেছে, পুরোটাই নিজস্ব অর্থে।
এখন যেহেতু মানষের পদ্মা সেতু নিয়ে বিস্ময় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাবিত করেছে, তাই এখন এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যকে প্রকৃত উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করার উপযুক্ত সময় বলে মনে হচ্ছে। প্রতিটি বিশাল প্রকল্পের মতো, সমালোচকদের একটি দল অভিযোগ করে থাকে যে এই পরিমাণ অর্থ শুধুমাত্র একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ করা আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বরং অপচয়। তাদের মতে, পদ্মার মর্মান্তিক এবং ধ্বংসাত্মক ইতিহাস – যথাঃ- 1967 সাল থেকে হেক্টরের পর হেক্টর জমির ব্যাপক নদী ক্ষয়ে বিলীন এবং অর্থনৈতিক প্রত্যাশার পরিসংখ্যান – এসবের মধ্য দিয়েও একটি স্কিম অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, শক্তিশালী পদ্মা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক বেশি ব্যবস্থাপনাযোগ্য সম্পদ এবং একটি অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের মতে এই বিনিয়োগ বিপুল পরিমাণে পরিশোধিত হবে।
অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন বিশিষ্ট ফেলো বলেছেন যে, সেতুটি দেশের অর্থনীতিতে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করবে। এই সেতুর মাধ্যমে সমগ্র জাতির সাথে দরিদ্র জেলাগুলির সংযুক্তির মাধ্যমে সেখানকার দারিদ্র্য বিমোচন, এছাড়াও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সুবিধা প্রদান করবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় এটি প্রায় তিন কোটি মানুষকে সাহায্য করবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এই এলাকাগুলিকে উন্নয়ন-কেন্দ্র তথা রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম -এর সাথে যুক্ত করবে। সুতরাং, তারা বাণিজ্যের পথ হিসেবে কাজ করতে পারবে। এটি ক্যারিয়ার এবং আয়ের অন্যান্য বিকল্পগুলি উন্মুক্ত করবে।
এই ধরনের অবকাঠামো থেকে লাভের জন্য, সুযোগ এবং পরিষেবাগুলির বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য হবে। গ্রামগুলিতে নির্ভরযোগ্য শক্তি, ইন্টারনেট, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো উন্নত সুযোগ-সুবিধা থাকলে মানুষ ততটা শহরমুখী হবেনা।
দ্য বিজনেস ইন্সপেকশনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে যে দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ১.২৩ শতাংশ হারে বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে, যেখানে মেগা প্রজেক্টের সমাপ্তির ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও, এই উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা আরও সফল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। “পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প” এর প্রধান সমন্বয়কারী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোঃ মাসুদ এর অনুসারে, সেতুটির অবস্থানটি বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ এটি একসময় ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এবং ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত হবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) রাজধানী এবং কুয়াকাটার সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের সময় কমাতে পদ্মা সেতুর নিচের ডেকে ফাইবার-অপটিক ক্যাবল স্থাপন করেছে। সুতরাং, নেটওয়ার্কিং এবং বিশ্বায়ন খাতে আরেকটি ট্রেডমার্কের ফলাফল হিসাবে, এই সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার পরে রাজধানীতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ আশা করা যাচ্ছে।
কিন্তু একটি সেতুতে এই সমস্ত বিনিয়োগ, যখন সমগ্র দেশ এখনও দারিদ্র্য এবং ক্ষুধার অভিশাপে জর্জরিত, এই মুহূর্তে বিলাসিতা বলে মনে হচ্ছে। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, এই বিশাল প্রকল্পের যখন উদ্বোধন হচ্ছে, তখন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত হচ্ছে। মজার ব্যাপার হল, এই ভয়াবহ সংকটে স্থানীয় সরকারগুলোর প্রতিক্রিয়া ভয়ানকভাবে অব্যবস্থাপিত। বাংলাদেশ গ্রহের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। তাই এই বন্যা পরিস্থিতিও দুর্বল পরিকল্পনা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবের প্রমাণ। যদিও এই পদ্মা সেতু প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে “পর্যাপ্ত বাজেট নেই”-এ অজুহাতে পানি পরিবহন ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ পরিকল্পনায় যথাযথ বিনিয়োগ আটকে রাখা হয়েছে। আর এই বাস্তবতায় ইন্ধন যোগাতে অনেকেই দাবি করছেন এই প্রকল্প এবং এর পেছনের প্রচেষ্টা ২০২৩ সালের আসন্ন নির্বাচনে ভুয়া গণতন্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বন্ধ করতে সরকারের প্রচেষ্টার চেয়ে বেশি কিছু নয় ।
শুধুমাত্র সময়ই বলে দেবে যে উন্নয়নের এই জোয়ার আসলে গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল দেশের দিকে একটি গণ পদক্ষেপ হিসেবে বৈধ হবে, নাকি গভীর দুর্নীতির সংঘর্ষকে অসাড় করার একটি শোপিস হিসেবে। তবে মনে রাখবেন এটিই প্রথম বিশাল জাতীয় প্রকল্প যা বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক সম্পদের ওপর নির্ভর না করেই বাস্তবায়ন করেছে। এবং এটি উল্লেখ্য যে, পদ্মা সেতু পরিবহন, যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক একীকরণের উন্নত পদ্ধতিকে আলোকিত করবে। তাই, একটি প্রকল্পের সমাপ্তিতে বাংলাদেশি জনগণ যে গর্ব ও বিস্ময় অনুভব করে তা ব্যাপক অর্থে সম্পূর্ণরূপে বৈধ।
Navigating the IELTS listening section can be a daunting task, especially for those with short…
Writing, especially during exams, can be daunting. Despite considering myself a proficient writer, tackling the…
I have an overall 8.5 score with a ✨9✨ in Reading (makes me giggle for…
Last year, I embarked on my IELTS journey with minimal preparation, courtesy of a jam-packed…
I've been seeing people say they don't understand what's going on with Israel and Palestine…
The death toll in Gaza and the Occupied West Bank on the 31st December 2023…