ওর ঘুম আসে না। চিন্তা হয়। কিন্তু ছোট্ট মানুষের আবার কিসের চিন্তা! ও ছোট্ট মানুষ, তবে খুব ছোট নয়। বয়স ওর বারো বছর। ত্রসরেণুর মতো ওর চিন্তা জগতে ভাসতে থাকে দুশ্চিন্তার কণাদল। কিন্তু কিসের চিন্তা! মা মাথায় হাত দিতেই শুয়ে পড়ে ঘুমের ভান করে। কিন্তু মা জানে ওর ঘুম আসেনি। কারণ ঘুমে নিমগ্ন থাকলে ওর বুকটা খুব কাঁপতে থাকে। ছোটবেলায় গাছ থেকে পড়ে গিয়ে বুকে ব্যথা পেয়েছিল ও। অবশ্য ও জানে না সেকথা। কিন্তু ওর মা জানে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মা বলে, ‘ঘুমিয়ে পড় বাজান, সকালেই তোর জন্য ভাতের ব্যবস্থা করমু।’ মায়ের কথা শুনে ওর বুকের স্পন্দন বেড়ে যায়। কিন্তু ওর চিন্তার হেতু যে খাবার না, অন্যকিছু, সেটা ও কিভাবে বুঝাবে মাকে। চিন্তার বিরুদ্ধে গিয়ে অনভিপ্রেত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বাধ্য হয় ওর মস্তিষ্ক। ঘুমিয়ে পড়ে মা-ও।
কিন্তু মনের ঘুম না হলে কি মস্তিষ্কের আর বিশ্রাম নেয়া হয়! চোখবুঁজে একরকম ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ও। ভাবতে লাগে সে-ই কথা। কোন সে কথা যা মা-কেও বলতে পারছে না ও। আর কিসেরই বা চিন্তা! ওর বাবা মারা গেছে সেই কবে। মা’ই ওর বেঁচে থাকার প্রেষণা। মা ছাড়া দুনিয়াতে আর কেউ নেই ওর। অভাবের সংসার। কোনমতে কেটে যায় বেলা, ওর কলিজায় হাতুড়ি মারে অবহেলা। ওর বয়সী ছেলেমেয়েরা যেখানে স্কুলে পড়ে, ও সেখানে পতাকা বিক্রি করে বেড়ায়। মায়ের ইচ্ছা ছেলেকে শিক্ষিত বানাবে, কিন্তু অভাব যে শিক্ষার অন্তরায়। অবশ্য এতে মায়ের দুঃখ নেই। কারণ মা বিশ্বাস করে দেশ ও দশের জন্য যে কাজ করতে জানে, সেই শিক্ষিত। কিন্তু মায়ের চিন্তা ছেলেটা কাজ করতে পারবে তো দেশের জন্য! হতে পারবে কি শিক্ষিত!
ভোর হবার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে ও। ধূসর রঙের থলিটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকে আকাশপটে। পেছন থেকে মায়ের হাত পড়তেই সতর্ক হয়ে উঠে। ‘কি অইছে বাজান, রাইত থেইকা তুই কিসের চিন্তা করতাসস? খিদা লাগছে?’ ‘না মা। খিদা লাগে নাই। খিদা সহ্য কইরা থাহন যায়, কিন্তু দেশের খিদা কি সহ্য করা যায়?’ ‘কি কস, কিসের দেশের খিদা!’ ‘দেশের ও খিদা লাগে মা। দেশের খাবার মানুষের ভালবাসা, দেশপ্রেম। কিন্তু…’ ‘কিসের কিন্তু?’ ‘গতকাল বিজয় দিবস গেছে মা। অনেক পতাকা বেচছি। হেরা আমারে জিগায় পতাকার দাম কত? পতাকার দাম তো অমূল্য মা। তাতেও সমস্যা নাই। কিন্তু বিজয় দিবসের পর যে হেরা সেই পতাকারে জমিনে পাড়ায় মারে।
পতাকার দাম কি শুধু একদিন, ২০ টাকা দিয়া শোধ হয়! আমার কষ্ট লাগে মা, হেগো দেশপ্রেমের চেতনা একদিনের, আমাগো সারাজীবনের। আমি পতাকা টোকাইতে বের হমু মা। জমিন, কেতন, সাফ করতে হইবো। পতাকারে বাঁচাইতে হইবো পদদলিত হওয়ার হাত থেকে।’ মায়ের চোখে জল চলে আসে। মায়ের চোখের জল মুছতে মুছতে ও বলে উঠে, ‘ জানো মা যখন কেউ লাল সবুজ পতাকায় আঘাত করে মনে হয় যেন আমার শহিদ বাবার শরীরে আঘাত করছে। জমিনে লাল সবুজ কেতন দেকলে আব্বার রক্তের কথা মনে পড়ে যায়।’
কাঁদতে কাঁদতে মা বলে, ‘যা বাজান।’ ও বলে উঠে, ‘কাপড় বেচতে গেলাম মা। পতাকা তো বিক্রি করা যায় না।’ আর লাল সবুজ দিঘল পতাকাকে বাঁচাবার জন্য এগিয়ে যেতে যেতে ও বলতে থাকে – ‘জমিন, কেতন, সাফ; সবুজ পতাকায় বাপ।’
Visit our Instagram and Facebook.
Follow The Interlude for more.
Navigating the IELTS listening section can be a daunting task, especially for those with short…
Writing, especially during exams, can be daunting. Despite considering myself a proficient writer, tackling the…
I have an overall 8.5 score with a ✨9✨ in Reading (makes me giggle for…
Last year, I embarked on my IELTS journey with minimal preparation, courtesy of a jam-packed…
I've been seeing people say they don't understand what's going on with Israel and Palestine…
The death toll in Gaza and the Occupied West Bank on the 31st December 2023…